User:Mtotol
কোথাও আমি নেই। এমনটা যদি বাস্তবে হতো আর আড়াল হতে তা অনুভব করতে পারতাম, তবে কত-ই না বিস্ময়কর অনুভূতি হতো আমার।
সকালে খবরের পাতা হাতে নিলাম। মোটা মোটা শব্দে দূর্নীতি, রাজহানি, লুটপাট, ধর্ষণ আর দূর্ঘটনার শিরোনামে সংবাদ ভরপুর। তারপর মস্তিষ্কের কোষ গুলো নীতিবাচক ধারণায় নিউরন নিঃসরণ করে চিন্তা-চেতনা আর দক্ষতা উল্টা-পাল্টা করে দিল। অতপর খবরের পাতা বন্ধ করে আধুনিক মোবাইলে মনোনিবেশ করি। নীতিবাচক সংবাদ তো আছে-ই, তাতে যোগ হলো অশ্লীলতা প্রদর্শনের অসীম প্রতিযোগিতা।
নিজকে ও পরিবারকে সংযম, সংহতি ও সুরক্ষার বিকল্প উপায় কি তবে অফলাইনের জীবনে নির্ভর করা ?
এজন্যেই উস্তাদ নোমান আলী খান, শায়েখ জসিম উদ্দিন রহমানী, আল্লামা ত্বকি উসমানী, শায়েখ আহমদ উল্লাহ, আরিফ আজাদ, মাহমুদুল হাসান সোহাগ ও ডাঃ নাবিলসহ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সন্তানগণ সুন্নাহর দিকে আত্মনির্ভর হওয়ার পরামর্শ দেন।
ইয়াকুব ভাইয়ের বাসা, ম.আ.ক টুটুল
কমলপুর, ভৈরব। ০৪/০৭/২০২৪ খ্রি.
তুমি আমাকে যা দিয়েছ, তা ভালবাসা নয়, তা কেবলমাত্র সময়। তোমার দেওয়া সময়কে আমি ভালবাসা ভেবেছি আর তোমার কল্পনায় বিভোর থেকেছি। যখন তুমি আমার চেয়ে বিকল্প পেয়ে গেল, তখন চলে গেলে। তাই তোমাকে শত ভালবাসার পরও ঘৃণা করি। ধূসর আতর আপনাকে দেওয়ার মত আমার কাছে অধিক প্রিয় জিনিস অবশিষ্ট নেই। আমার বাবা গত শবে মেরাজের রাত্রে আমাকে এই আতর দিয়েছিলেন। আমার বাবার আতর টা আজো আমি গায়ে মাখিনি। গ্রহণ করুন এই আতরটা। এক শ^াসে জবা এই বাক্য গুলো শোভনকে বলে, তার আতরের প্যাকটা গুছিয়ে দিয়ে চলে গেল। জুম্মার শেষে জবার বিয়ে।
জবার বিয়ে নামাজের শেষে মসজিদে পড়ানো হবে। তাই শোভন আতর গায়ে দিবে নিয়ত করে পাঞ্জাবী পড়ল। জবার দেওয়া আতরের প্যাকেটা খুলে, কিছুক্ষণ নিরবে ভেবে আবার আতরটা প্যাকেটে ভরে মসজিদে চলে গেল। মসজিদে শোভন অনুভব করল, তার পাশে জবা বসে আছে। নাকের মাঝে আতরের ঘ্রাণ আসে না, তবে অদ্ভুত পরিচিত ঘ্রাণ যেন শোভনকে বেষ্টন করে রাখল। শোভনের কাছে মনে হলো, মসজিদ মাঝে জবার ঘ্রাণের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিল। কোন রকম নামাজ ও বিয়ে শেষ করে শোভন চলে গেল নিজ বাড়িতে।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে জবা নতুন সংসারের যাবে, চিরচেনা বাবার বাড়ি হতে বিদায় বেলায় কান্না মুহুর্তেও শোভনকে জবা দেখতে পেল না। জবার আবেগ যেন আরো উদগ্রীব হয়ে চোখের জলে ধুয়ে গেল।
রাতে শোভন ভৈরব লঞ্চ ঘাটে গিয়ে একা একা বসে ভাবতে লাগল- মানুষের শরীরের গন্ধ আছে, সে তা আগে জানত না। জবার শরীরের ঘ্রাণ আগে কখনো টের পায়নি।
বিয়ের ৯ মাস পর জবা ঈদের মধ্যে বাবার বাড়ি আসল। ঘটনা চক্রে শোভনের পড়ার টেবিল গুছাতে গিয়ে আতরের প্যাকেট খুজে পায়। আতরটা এখনো খোলা হয়নি। আগের মতই আছে। রাতে জবা শোভনকে বলব,
জবাঃ শোভন ভাই, আমার আতরটা কোথায় ? শোভনঃ আছে, টেবিলের ভিতর। জবাঃ আপনি আতর টা ব্যবহার করেন নি কেন? শোভনঃ করব, তবে বিশেষ কোন দিনে। জবাঃ আপনার আবার বিশেষ দিন! নাকি আপনার বিয়েতে গায়ে মাখবেন ? শোভনঃ পুরাতন আতর কি আমার বিয়েতে গন্ধ ছড়াবে ? বিয়ের পর আমার বউয়ের গন্ধই তো আমার চিরদিনে আতর। সেখানে আপনার আতরের গন্ধ ধারে-কাছেও যাবে না। জবাঃ যার বিয়ের মুরদ নাই, তার নাকি হবে বউ ও বউয়ের গন্ধ। এই কথাবার্তার মাঝে জবার স্বামী তাকে ফোন করল, জবা চলে গেল। সন্ধ্যার পর শোভন ফেরীঘাটে গিয়ে কার্গোর উপর নিরালা বসে ভাবতে লাগল, তার বিয়ে হবে, বিয়েতে জবার দেওয়া আতর ব্যবহার করবে। বিয়ের শেরওয়ানীতে জবার দেয়া আতরের গন্ধ পুরো বিয়েবাড়ী একাকার হবে। তাৎক্ষণিক শোভন সিদ্ধান্ত নিল, বিয়ে দ্রুত করতে হবে। পরক্ষণে শোভন কালা জাহাঙ্গীর ও টুটুলকে ফোন দিয়ে কার্গোর উপর বৈঠক করল, বিয়ে করতেই হবে। কিন্তু হোসেন মিয়ার (শোভনের বাবা) কাছে বিয়ের কথা বলার মত সাহস কারো হলো না। টানা ৩ দফা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিল, শোভন বিয়ে করবে না, বিদেশ যাবে। শোভনের পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করে সৌদি আরব যাবে সিদ্ধান্ত নিল। জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্ট করে সৌদি আরবের ভিসার প্রেসেসিং শেষ করে আগামী বোধবার ফ্লাইট টিকেট কেটে নিল। আমার ইমেগ্রেশন ভেতরে আতর ফেলে দেয়।