Jump to content

User:Mithila Acharjee

From Wikipedia, the free encyclopedia

রবীন্দ্রনাথের সময়ে রবীন্দ্র নৃত্যে তার প্রযোজনায় রূপসজ্জা ও পোশাক----- পর্ব-১

ব্রিটিশ অধিকৃত আধুনিক ভারতের কবি রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব ও প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত নৃত্যকলা কোন শ্রদ্ধার আসনে ছিল না।স্বভাবতই এর মানও ছিল ক্রমশ নিম্নগামী।রবীন্দ্রনাথই প্রথম যিনি শিক্ষার অন্যতম বাহনরূপে নৃত্যকলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন এবং তৎকালীন বাবু সংস্কৃতির প্রভাব থেকে নৃত্যকলাকে সমাদৃত করেছিলেন বাংলার অভিজাত ও পরিশিলীত সমাজে।এমনকি এই সংস্কৃতির ব্যাপক অনুশীলনের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন 'বিশ্বভারতী' ও 'শান্তিনিকেতন'-এর মত আশ্রম। শুধুমাত্র নৃত্যকলা নয়,নৃত্যের পাশাপাশি অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়েও রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।ভারতীয় তথা বিশ্বের নৃত্যে আহার্য অভিনয় অর্থাৎ বেশভূষা,রূপসজ্জার স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।রবীন্দ্রনাথের সময়ে শান্তিনিকেতনে পরিবেশিত নৃত্যও তার ব্যতিক্রম নয়।নৃত্যের সাথে সাযুজ্যতা রেখেই রূপসজ্জা ও পোশাক তৈরী করা হত।তবে পোশাক তৈরীর ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ তখনকার ইউরোপীয় আদর্শে অনেকটা প্রভাবিত হয়েছিলেন।তার প্রমাণ মেলে তাঁর রচিত বিভিন্ন গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যে।

"বাল্মিকী প্রতিভা" গীতিনাট্যে আমরা বাল্মিকীর পোশাকে ইউরোপীয় ধরণ দেখতে পাই।বাল্মিকীর পিঠের দিকে লাল জোব্বার মত একটা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।তাতে নাকে বিলিতি রাজরাজ্জাদের ম্যান্টেলের(Mantle-আঙরাখা)আভাস পাওয়া যায়।তার সঙ্গে ছিল রুদ্রাক্ষের মালা।এই গীতিনাট্যে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর রূপসজ্জায় কিছুটা প্রথাগত পৌরাণিক রীতি অনুসরণ করা হয়েছিল।লাল ও সাদা শাড়িতে জরির কাজ ছিল এবং সেই শাড়িগুলি লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।বনদেবীদের সাজে নানা রঙের শাড়ি,লতাপাতা এবং এলোচুলে ফুল ইত্যাদি ব্যবহৃত হত।অর্থাৎ,প্রথমদিকে রূপ কল্পনার মধ্যে কিছুটা পশ্চিমী তথা ইউরোপীয় আদর্শ ছিল।পরবর্তীকালে অবশ্য সাজসজ্জায় কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটে।যেমন-দস্যুদের রূপসজ্জার বদলে দেখা দিল ধুতি,ফতুয়া এবং পাগড়ির বদলে মাথায় একটি ফেট্টি বাঁধা। ১৮৮৮ খ্রীস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথের তৃতীয় গীতিনাট্য "মায়ার খেলা" মঞ্চস্থ হয়।যার সাজপোশাকে বেশ জৌলুস ছিল।সখাদের পোশাক ছিল খুব টকটকে রঙের সার্টিনের পাঞ্জাবি ও ধুতি,তার সঙ্গে ঈষৎ গোঁফের রেখা।আর মায়াকুমারীদের হাতে দন্ডের মাথায় ইলেকট্রিক আলো জ্বলছিল আর নিভছিলো।বোধহয় তা ছিল বিলিতি পরীদের অনুকরণে।তখন সব বিষয়ে বিলিতি অনুকরণটাই প্রবল ছিল। রূপসজ্জায় শিল্পাচার্য নন্দলালের পরিকল্পনা ছিল অভূতপূর্ব।তিনি যে কতখানি পরিশ্রমে দিনের পর দিন প্রতিটি চরিত্রের সাজ পোশাক গুলি কলাভবনের ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপকদের সাহায্যে করিয়েছিলেন তা সত্যি অনবদ্য।তার পরিকল্পিত সাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল রঙের ছন্দসাম্য।পিসবোর্ডের উপর সাঁটা নানা রঙের কাগজ ও কাপড়ের উপর আলপনায় যেসব সাজ পোশাক রচনা করেছিলেন সেগুলো ছিল প্রত্যেকটি চরিত্রের অনুকূল অলঙ্কার বিশেষ।নানা প্রকার রঙিন কাপড়ের সমন্বয়ে রচিত জামা-কাপড়ের সঙ্গে মিলে তা প্রত্যেক অভিনেতাকে একটি সার্থক শিল্পীরূপে পরিণত করেছিল।সবচেয়ে বড় কথা হল,যখন বিভিন্ন চরিত্র একসঙ্গে রঙ্গমঞ্চে দাঁড়াতো তখন কারও সঙ্গে কারও সাজ পোশাকে ও রঙে কোন বিভেদের সৃষ্টি করত না।সব মিলিয়ে মনে হত যেন একটি বিরাট ছন্দময় রঙের জগৎ দর্শকদের সামনে রূপ মেলে দাঁড়িয়েছে।যেন একটি রূপকথার রঙিন জগৎ।এই সাজ পোশাক কোন প্রকার মামুলি প্রথায় তিনি রচনা করেননি।কোন দেশের কোন প্রকার সাজ পোশাকের সঙ্গে তা মিলবেও না।এইসব সাজসজ্জা নতুন ধরনের হলেও মনে হত যেন এই নাটকের চরিত্রে এছাড়া আর কোনও খাসই মানায় না।এদিক থেকে "তাসের দেশ"-এর সাজসজ্জাকে বলা চলে শিল্পাচার্যের আরেকটি মহৎ সৃষ্টি। " তাসের দেশ" নৃত্যনাট্যের পোশাক পরিকল্পনায় শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর অবদান অবিস্মরণীয়।শ্রীযুক্ত শান্তিদেব ঘোষ এ সম্বন্ধে বলেছেন-"প্রথমবার নাটকটির সাজসজ্জার পরিকল্পনা ও রচনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন শিল্পাচার্য নন্দলাল ও প্রতিমাদেবী।নন্দলালের উপর ছিল দায়িত্ব,নিয়েছিলেন প্রতিমাদেবী।নন্দলাল,সম্পূর্ণ নিজের মত পুরুষ চরিত্রের সাজগুলো তৈরী করেন।প্রতিমাদেবী করান জাভার(বর্তমান ইন্দোনেশিয়া)নৃত্যনাট্যের নানা প্রকার ছবির সঙ্গে মিলিয়ে।কিন্তু,কলকাতায় প্রথম রাত্রির অভিনয়ের সময় সেই সাজে নাচ ও চলাফেরা করতে মেয়েদের গুরুতর অসুবিধা বোধ হওয়ার পরের দিন সকালের মধ্যেই নন্দলাল বাবু,প্রতিমাদেবী ও সুরেন বাবু একত্রে ভেবেচিন্তে মেয়েদের সাজের আমূল পরিবর্তন করেন।"এই নাটকে স্বতন্ত্র প্রকৃতির মুখোশও ব্যবহৃত হয়েছিল। "শ্যামা" নৃত্যনাট্যে গুরুদেবের সময় অনেকবারই কোটালের চরিত্রে নৃত্যাভিনয় করেছেন সিংহলবাসী ছাত্র অনঙ্গলাল।বীরোচিত ক্যান্ডি নাচের তালে,তলোয়ার হাতে উত্তীয়কে হত্যার জন্য নাচের শেষদিকে তেহাইয়ের সঙ্গে উত্তীয়ের উপর তলোয়ার নিয়ে প্রবল বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ত এই সেই মুহূর্তে মঞ্চের আলো নিভিয়ে দেওয়া হত।এই নাচটি নাটকের প্রয়োজনে তৈরী করে নেওয়া হয়েছিল।তলোয়ার হাতে এ ধরনের নাচ সিংহলের ক্যান্ডি নাচে নেই।অর্থাৎ,এ থেকেই শ্যামা নৃত্যনাট্যে এবং অন্যান্য নৃত্যনাট্যে গুরুদেবের সময়কালীন আহার্য ও আঙ্গিক অভিনয়ের একটি সুস্পষ্ট চিত্র পাই।

সূত্র--ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মাধ্যম।