Jump to content

User:KhandakerAlMoin

From Wikipedia, the free encyclopedia

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ: আমাদের করণীয়

সন্ত্রাসবাদ বিশ্বের প্রাচীনতম ঘটনাগুলোর একটি। কালের পরিক্রমায় এটি বিভিন্ন সময়ে নিজের রূপ বদলে ফিরে এসেছে নতুন আঙ্গিকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক, মতাদর্শগত বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সহিংসতা বা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ক্রমাগত বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ের সন্ত্রাসবাদ মূলত ৯/১১ ও আরব বসন্ত পরবর্তী ঘটনা। সন্ত্রাসবাদ এ দেশের সৃষ্ট কোন উপাদেয় না হলেও বিশ্বায়নের উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশ এটি লাভ করেছে। অতীতে আমাদের দেশের কমিউনিস্ট সন্ত্রাসীদের সাথে যেমন কোল্ড ওয়ার সমসাময়িক সোসালিস্ট আন্দোলনের যোগসূত্র ছিল। তেমনি ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীদের সাথেও সোভিয়েত-আফগান সংকট পরবর্তী মুজাহিদদেরও যোগসূত্র ছিল। বাংলাদশের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি বিভিন্ন সময়ে দেশে অনেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠির উথান প্রত্যক্ষ করার পাশাপাশি সে সব গোষ্ঠির চূড়ান্ত পরিণতিও দেখেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের জনগনের সুস্পষ্ট অবস্থান, সরকারের সুনিদিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিচক্ষণ ব্যবহারের কারণে।

প্রতিষ্ঠার পর হতে র‌্যাব তার ম্যানডেটের আলোকে বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ দেশের প্রথম প্রজন্মের জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোর শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে হাল আমলের নিষিদ্ধ হওয়া জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আমীরসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে এই জঙ্গিগোষ্ঠিগুলোর নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয় র‌্যাব। হুজিবি’র মুফতি হান্নান, জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অপারেশনাল কমান্ডার মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল এবং ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলায় ব্যবহৃত বোমাগুলোর প্রস্তুতকারক জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকেও গ্রেফতার করে র‌্যাব। বিগত দশকে টার্গেট কিলিং এর মাধ্যমে ১৩ জন মুক্তমনা ব্লগার ও লেখককে হত্যার মধ্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা আনসার আল ইসলামের আধ্যাতিক নেতা মাহমুদ হাসান গুনবিসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় দেশে তেমন কোন জঙ্গি হামলা সংঘঠিত না হলেও ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার মাধ্যমে পুণরায় জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব ফুটে ওঠে। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনীর সাথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মূল অভিযান তৈরীর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে র‌্যাব। পরবর্তীতে আশুলিয়ায় হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী জেএমবির প্রধান সারোয়ার জাহান, গাজীপুরে হলি আর্টিজান হামলার অর্থ, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক সরবরাহকারী জেএমবির শুরা সদস্য মামুনুর রশীদ রিপন, চাপাইনবাবগঞ্জে হলি আর্টিজান মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি জেএমবি শীর্ষ নেতা শরিফুল ইসলাম খালিদসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করে। দেশ ব্যাপী বিভিন্ন স্থানে একের পর এক জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে দিয়ে বিপুল সংখ্যক জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

জঙ্গিবাদ দমনে দীর্ঘ এই পথ চলায় র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে তার অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে এ দেশে জঙ্গিবাদকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা, জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের এর সাথে জড়ানোর কারণ, জঙ্গি সংগঠনগুলোর দ্বারা নতুন জঙ্গিদের নিয়োগ ও তাদের মৌলবাদী করার জন্য নির্ধারিত কৌশল, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের দ্বারা নেওয়া জঙ্গিবাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং জঙ্গিবাদে জড়ানো সদস্যদের পরিবারগুলোর সমাজের মূলধারায় বসবাসের ক্ষেত্রে যেসকল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় সেগুলো নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করে।

মানুষ কেন জঙ্গিবাদে লিপ্ত হয়?

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে জড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ হল আদর্শগত বা ধর্মীয় প্রত্যয়। জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোর সাথে জড়ানো ব্যক্তিরা এমন চরমপন্থী গোষ্ঠীর প্রতি আকৃষ্ট হয় যেগুলো তাদের মতাদর্শগত বা ধর্মীয় বিশ্বাস পূরণের পথের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই বিশ্বাসগুলো তাদের সহিংসতাকে একটি পবিত্র বা নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে দেখতে সহায়তা করে। এটি অনেক ক্ষেত্রে লোভনীয় হতে পারে। এছাড়ও এই মতাদর্শ ধর্ম, জাতীয়তাবাদ বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের মধ্যে নিহিত থাকতে পারে। যে ব্যক্তিরা বর্তমান আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে বিতৃষ্ণা বোধ করেন তারা জঙ্গিবাদী মতাদর্শের প্রতি বেশি সংবেদনশীল।

অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু ব্যক্তি মানসিক দুর্বলতার কারণে জঙ্গিবাদের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজন যারা ইতিমধ্যেই জঙ্গিবাদে জড়িত তারা মানসিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের উপর সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ব্যক্তিগত অভিযোগ এবং প্রতিশোধ পরায়ণ ব্যক্তিদের তারা জঙ্গিবাদে জড়ানোর জন্য প্ররোচিত করতে পারে। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে বা তাদের কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষতি, অবিচার বা সহিংসতার অভিজ্ঞতা মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিতে পারে যা তাদের নিপীড়কদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বলে তারা বিশ্বাস করে। র‌্যাডিকেলাইজেশন প্রক্রিয়াটি অনেক সময় গোপনীয় সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে ঘটে, যেখানে এর ব্যবহারকারীরা জঙ্গিবাদের ধারনা প্রকাশ করে এবং বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা ক্যারিশম্যাটিক নেতাদের দ্বারা জঙ্গিবাদে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। অনেক সময় আর্থ সামাজিক কারণে মানুষ জঙ্গিবাদে জড়ায়। দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং মৌলিক মৌলিক সেবাগুলো লাভের অভাব মাঝে মাঝে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে যেখানে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো আর্থিক সহায়তা এবং সামাজিক অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটি অর্থনৈতিক কষ্টের সম্মুখীন ব্যক্তিবর্গের নিকট একটি আকর্ষণীয় প্রলোভন হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও অনেকে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার উপায় হিসেবে সহিংসতাকে বেছে নেয়।

কিভাবে ও কাদের বেছে নেয়

জঙ্গি গোষ্ঠিগুলো নতুন সদস্যদের নিয়োগের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে। তারা প্রায়ই নতুন সদস্যদের নিয়োগের জন্য বিদ্যমান সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোকে কাজে লাগায়। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজন ও সমবয়সীদেরকে আদর্শিক প্রবৃত্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে যোগদানের জন্য প্রভাবিত করতে পারে। বর্তমানে ইন্টারনেট উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলির জন্য নতুন সদস্য নিয়োগ এবং তাদের উগ্রবাদী মনোভাবাপন্ন করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম, অনলাইন ফোরাম এবং এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং অ্যাপগুলি জঙ্গিবাদ প্রচার এবং সম্ভাব্য নিয়োগকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি বিশাল প্লাটফর্ম। সেখানে তারা তাদের নিজস্ব ডিজাইনকৃত প্রোপাগান্ডা ও র‌্যাডিকেলাইজেশন ম্যাটেরিয়াল সমৃদ্ধ ভিডিও, পাম্পলেট ও বিভিন্ন অনলাইন সামগ্রী প্রচার করে যেগুলো জঙ্গিবাদের মতাদর্শ প্রচার করে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপনের মাধ্যমে সহিংসতাকে মহিমান্বিত করে এবং তাদের উদ্দেশ্যকে ন্যায্যতা দিয়ে তাদের মতাদর্শের প্রতি নতুন সদস্যদের আগ্রহী করে তোলে। জঙ্গিগোষ্ঠিগুলো প্রায়শই সে সব দুর্বল ব্যক্তিদের টার্গেট করে, যাদের মধ্যে ব্যক্তিগত হিনমন্নতা, ট্রমা বা বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি রয়েছে। যা তাদের মূলধারার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের তাদের আহবানের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে। এছাড়াও জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের সংগঠনে যোগদানের বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রলুব্ধ করতে অর্থের প্রতিশ্রুতি, চাকরির সুযোগ বা তাদের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, যে সকল অঞ্চলে জঙ্গিগোষ্ঠিগুলোর উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেখানে প্রান্তিক বা সামাজিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর জন্য বাধ্য করা হয় বা হুমকি দেওয়া হয়। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, কোন অপরাধের ফলে কারাগারে গিয়ে অনেক কয়েদিরা জঙ্গিবাদী মতাদর্শের সংস্পর্শে এসে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় ও সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে বাহিরে এসে বিদ্যমান জঙ্গিদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে দেখা যায়।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের জন্য সরকার, বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি বহুমুখী উদ্যেগের প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ একটি আদর্শিক সমস্যা। তাই সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থাগুলিকে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা প্রচারিত চরমপন্থী মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পাল্টা-আখ্যান তৈরি করা উচিত। এই আখ্যানগুলিতে সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও অহিংসার উপর জোর দেয়া উচিত। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি বিশেষভাবে জরুরি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সমালোচনামূলক চিন্তার বিকাশ, সহনশীলতার প্রচার এবং চরমপন্থী মতাদর্শের মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে। সম্প্রদায়গুলোর সাথে জড়িত হয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে থাকা শ্রেনিকে চিহ্নিত করে তাদের সাথে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করে তাদের বিভিন্ন অভিযোগের সমাধান করা মৌলবাদ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। আজকের ডিজিটাল যুগে অনলাইন র‌্যাডিক্যালাইজেশন প্রতিরোধের প্রচেষ্টা অত্যাবশ্যক। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম, সরকার এবং সুশীল সমাজ সংস্থাগুলিকে উগ্রবাদী মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ করে এমন অনলাইন পাল্টা বর্ণনা প্রচার করার সময় উগ্রবাদী বিষয় বস্তু নিরীক্ষণ এবং অপসারণ করতে সহযোগিতা করতে হবে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের জন্য আর্থ-সামাজিক কারণগুলিকে মোকাবেলা করা অপরিহার্য। অর্থনৈতিক বিকল্প হিসেবে জঙ্গিবাদের আবেদন কমাতে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা এবং সামাজিক পরিষেবাগুলিতে সরকার এবং এনজিওদের বিনিয়োগ করা উচিত। জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য পুনর্বাসন প্রোগ্রাম, মানসিক সহায়তা, শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং সমাজে পুনঃআত্তীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ সকল কার্র্যক্রমের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে অবশ্যই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং প্রয়োজনে মৌলবাদে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করার মাধ্যমে এদের বিকাশরোধ করতে হবে।

সমাজে/পরিবারে আত্তীকরণের চ্যালেঞ্জ

জঙ্গিবাদে জড়িতদের পরিবার সমাজে প্রায়ই উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। প্রতিবেশী এবং পরিচিতরা জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকার কারণে তাদের এড়িয়ে চলে। এছাড়াও তাদের পরিবার প্রায়ই তাদের সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কলঙ্ক এবং প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হয়। তাদের সন্দেহের চোখে দেখা এবং তাদের আত্মীয়দের কাজের জন্য তাদের দায়ী করা হয়। প্রিয়জনদের সহিংস কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারণে জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদের মানসিক আঘাতের ফলে অপরাধবোধ, লজ্জা এবং দুঃখের অনুভূতির সাথে মোকাবিলা করা তাদের পক্ষে অনেক সময় অপ্রতিরোধ্য হতে পারে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তাপ্রাপ্তি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠে। জঙ্গিবাদে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের পরিবার অর্থনৈতিক কষ্টের সম্মুখীন হয়। জঙ্গিদের অনেক পরিবার কারাভোগ বা মৃত্যুর কারণে তাদের প্রাথমিক উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে অর্থনৈতিক কষ্টের দিকে ধাবিত হয়। এছাড়াও জঙ্গিদের পরিবারগুলি জঙ্গি গোষ্ঠী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হুমকিসহ নিরাপত্তা উদ্বেগের সম্মুখীন হয়। এই নিরাপত্তা ঝুঁকি সমাজে তাদের নিরাপদে পুনঃসংযোগ করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

জঙ্গিবাদে জড়িত ব্যক্তিবর্গের পরিবারকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই পরিকল্পনাগুলো শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং কাউন্সেলিং ভিত্তিক হলে তার সুফল পাওয়া অনেকাংশে সহজ হয়। র‌্যাব সম্প্রতি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ভুল বুঝতে পারা কিছু তরুণ-তরুণীকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এসে তার সুফল পেয়েছে। র‌্যাব ডি-রেডিক্যালাইজেশন ও রিহেবিলিটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় শতাধিক জঙ্গিকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে এনেছে। র‌্যাবের এই সফলতাটি সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছে।

পরিশেষে, জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করার জন্য এমন একটি বহুমুখী পদক্ষেপের প্রয়োজন যেখানে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টার মধ্যে শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই নয় বরং এমন সমন্বিত কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি জঙ্গিবাদে জড়ানোর পেছনে অনুপ্রেরণাগুলো চিহ্নিত করবে। পরবর্তীতে জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগের পদ্ধতিগুলিকে লক্ষ্য রেখে এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে। অন্যদিকে জঙ্গিবাদে জড়ানো ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃআত্তীকরণের চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা একটি নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে।